ছবি: সংগৃহীত
সীমিত আয়ের মানুষের পুষ্টির একটি বড় অংশ পূরণ করে ফার্মের মুরগির ডিম। দুই সপ্তাহ আগে একটি ডিমের দাম ছিল ১০ টাকা ৫০ পায়সা। এখন তা ১৫ টাকা। দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা ব্যবসায়ীদের কাছে নেই। তারপরও দাম বাড়ছে। ১৫ দিন আগের দামের সঙ্গে তুলনা করলে প্রতিদিন সারা দেশের ক্রেতাদের কাছ থেকে সব মিলিয়ে বাড়তি নেয়া হচ্ছে ১৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার জানান, দেশে প্রতিদিন সব ধরনের ডিমের মোট চাহিদা চার কোটি ৫০ লাখ পিস। আর উৎপাদন আছে পাঁচ কোটির মতো।
তিনি বলেন, দেশে ডিমের উৎপাদন হঠাৎ করে কমে যায়নি। তবে পোল্ট্রি ফিডের দাম বেড়েছে। তারপরও খুচরা পর্যায়ে একটি ডিম এখন কোনোভাবেই ১৩ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। আসলে ডিমের বাজার খামারিদের নিয়ন্ত্রণে নেই। এটা নিয়ন্ত্রণ করে কিছু কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান। তারাই ঠিক করে দেয় ডিমের দাম।
এর পাশাপাশি পাইকারি ও খুচরা বাজারে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট তো আছেই।
সুমন হাওলাদার বলেন, প্রতিদিন সকালে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর লোকজন ডিমের দাম ঠিক করে দেয়। আর সেই দামেই সারা দেশে ডিম বিক্রি হয়। এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। তারা তাদের নির্দিষ্ট এজেন্টদের মাধ্যমে সকাল ১০টার মধ্যে মোবাইল ফোনের এসএমসএস এবং ফেসবুক পেজের মাধ্যমে সারা দেশে ডিমের দাম জানিয়ে দেয়৷ সেই দামেই বিক্রি হয়। এর সঙ্গে উৎপাদন বা চাহিদার তেমন সম্পর্ক থাকে না।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসেন বলেন, গত বছর একইভাবে ডিমের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করা হয়েছিল। তারপরও ঢাকা ও ঢাকার বাইরে দামে কিছুটা পার্থক্য ছিল। কিন্তু এবার এমনভাবে সিন্ডিকেট করা হয়েছে যে গ্রাম পর্যন্ত খুচরা দাম একই। গত বছরের আগস্টে একইভাবে ডিমের বাজারে কারসাজি করে দাম বাড়ানো হয়। তখন ভোক্তা অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে ও তদন্ত করে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ডিমের বাজারে সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানোর প্রমাণ পায়। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলাও হয়। ওই পর্যন্তই।
এসএম নাজের হোসেন বলেন, তাদের বিরুদ্ধে মামলা হলেও সেই মামলায় কোনো ফল হয়নি। তাদের শাস্তির আওতায় আনা যায়নি। তাই তারা মজা পেয়ে গেছে। আবারো সিন্ডিকেট করে মুনাফা লুটছে। বাংলাদেশে এখন পোল্ট্রি খামারি আছে ৬০ হাজার। তাদের মধ্যে ২০ হাজার খামারি ডিম উৎপাদন করেন। আর ৪০ হাজার খামারি মুরগি উৎপাদন করেন। এই ৬০ হাজার খামারের মধ্যে ১৯ হাজার খামারিকে কন্ট্রাক্ট ফার্মিং-এর আওতায় নিয়ে গেছে কয়েকটি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান। এটা দাদন ব্যবসার মতো। তাদের আগাম টাকা দিয়ে ডিম ও মুরগির দাম বেঁধে দেয়া হয়। সারা বছর সেই একই দামে ডিম ও মুরগি কেনে কয়েকটি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান।
দেশে মোট খামারের তিন ভাগের একভাগ তারা এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। বাকিরা বিচ্ছিন্ন। তাই কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো সহজেই বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তাদের আবার নিজস্ব ফার্মও আছে।
সাভারের খামারি দেলোয়ার হোসেন বলেন, এই সময়ে ডিমের চাহিদা একটু বেশি থাকে। কিন্তু ডিম উৎপাদন কমেনি। পর্যাপ্ত সরবরাহ আছে। আসলে এখন দাম আমাদের হাতে নেই। আর বাজারে যে ডিমের এত দাম তা কিন্তু খামারিরা পায় না। আমাদের একটি ডিম উৎপাদনে খরচ হয় ১০ টাকা। ৪০-৫০ পয়সা বেশি দামে আমরা বিক্রি করতে পারি। লাভের টাকা চলে যায় কর্পোরেটদের হাতে।
ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, আমরা গত বছরের আগস্টে ডিমের বাজার অস্থির হওয়ার পর পুরো বিষয়টি তদন্ত করেছি। আমরা দেখেছি বাজারে সিন্ডিকেট করে ডিমের দাম বাড়ানো হয়েছে। আমরা অভিযান চালিয়ে মামলা করেছি, জরিমানা করেছি। আমরা সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। আমাদের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে প্রতিযোগিতা কমিশন আটটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। কিন্তু তারপরও আবার সিন্ডিকেট সক্রিয়।
আই. কে. জে/
খবরটি শেয়ার করুন